Wikipedia

Search results

মজার গল্প

রামপেলস্টিল্টস্কিন
লেখকঃ তারার হাসি 



এই গল্পটি এমন এক সময়ের গল্প যখন অসহায় বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করতে আকাশ, মেঘ, স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসত দূত। এছাড়াও ভাল মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য কোন অজানা জগৎ থেকেও আসত সাহায্যরূপী দূত। এটি তেমনই এক গল্প, তাহলে শুরু করা যাক ...... 


একজন গরীব চাষী ছিলেন যার ছিল এক অসম্ভব বুদ্ধিমতী সুন্দরী কন্যা। চাষীটির প্রয়োজন ছিল একটুকরা জমি এবং তার জন্য রাজার সাথে দেখা করাটা দরকারী হয়ে পড়ল। রাজাকে মুগ্ধ করতে গিয়ে লোকটি রাজাকে বলে ফেলল খুব আত্মবিশ্বাস এবং গর্বের সাথে, “আমার একটা মেয়ে আছে যে খড় থেকে স্বর্ণের মোহর বানাতে পারে”। অবাক রাজা হুকুম দিলেন চাষীকে, সে যেন তার মেয়েকে রাজ-দরবারে নিয়ে আসে, কারণ তিনি তার সাথে কেউ মজা করবে তা পছন্দ করেন না।


তারপর যা হবার তাই হল, মেয়েটির অনুরোধ, অনুনয়, চোখের জল সব বিফলে গেল। খড়ের গাঁদায় পরিপূর্ণ একটা রুমে বন্দী করল রাজার লোকেরা। তাকে আরো বলা হল সকালের মাঝে খড়গুলি স্বর্ণের মোহরে পরিণত না হলে তার জন্য অপেক্ষা করছে শাস্তি।


অসহায় মেয়েটি একটা রুমে খড়ের গাদার মাঝে চরকার পাশে নিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে একাকী বসে থাকল, এছাড়া সে আর কি করতে পারত? সময় যাচ্ছিল খুব ধীরগতিতে, হঠাৎ একটা বামন কোথা থেকে যেন সৌভাগ্যের দূত হয়ে উধাও হল। বামনটি জানতে চাইল মেয়েটির কাছে তার মন খারাপের কারণ। মেয়েটির নির্দোষ সত্য উত্তর, “ রাজা আমাকে বলেছে খড়ের গাঁদার সব খড় স্বর্ণে রুপান্তরিত করতে, কিন্তু আমি জানিনা তা কিভাবে করতে হয়!” বামনটি এবার জানতে চাইল, সে যদি তা করতে পারে কিংবা করে দেয় তাহলে এর বিনিময়ে কি পাবে?


মেয়েটি তার গলার হার দিয়ে দিল। হারখানা পেয়ে বামনটি বসে পড়ল কাজে, দ্রুত গতিতে সব খড় স্বর্ণে পরিণত হল। সকালে রাজা তা দেখে মহাখুশি এবং তিনি আরো পেতে চাইলেন। পরদিন রাত্রে আবারো মিলারের মেয়েটিকে আরো অনেক বড় একটি ঘরে অনেক অনেক খড়ের গাঁদা সহ বিশাল একটা চরকা দিয়ে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হল এই বলে যে সবগুলিই যেন স্বর্ণের মোহর হয়ে যায়। গতরাত্রের মতই মেয়েটি একা একটা ঘরে বন্দী হয়ে পড়ল, অসহায় চোখে কাকে যেন খুঁজতে লাগল। এমন সময় বামনটা হাজির হল মেয়েটির সামনে এবং প্রশ্ন করল আজ সে কি পাবে তার কাজের বিনিময়ে। এবার মেয়েটির তার সোনার আংটিটা দিয়ে দিল বামনটিকে। রাজা পরদিন সকালে দেখতে পান ঘর ভর্তি স্বর্ণের মোহর। রাজা এতেও সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। এবার তিনি ঘরের এ দেয়াল থেকে ও দেয়াল পর্যন্ত খড়ের গাদায় ঠাসা বিশালের চাইতেও বিশাল একটা ঘরে মেয়েটিকে বন্দী করে ফেললেন। তবে রাজা এই কথাটাও দিলেন যে এবার রাজকন্যা সফল হলে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে রানী করবেন। 


সেই রাতেও বামনটি মেয়েটির সামনে উপস্থিত হল এবং তার শ্রমের বিনিময়ে কিছু চাইল। কিন্তু আজ মেয়েটির মন খারাপ খুব কারণ আজ তার কাছে কিছুই নেই। এবার বামনটি একটা শর্ত রাখল যে, রাজা তাকে বিয়ে করলে তাদের প্রথম যে শিশুটি জন্ম নিবে তাকে সে শিশুটি দিয়ে দিতে হবে। নিরুপায় অসহায় মেয়েটি সে শর্তেই রাজি হয়ে গেল, না হয়েও উপায় ছিল না। পরদিন সকালে চকচকে স্বর্ণের মোহরে ঘরভর্তি দেখে রাজা খুব খুশি হলেন এবং মেয়েটিকে বিয়ে করে তার কথা রাখলেন। রানী হবার পর তিনি সব ভুলে গেলেন। মাঝে মাঝে তার মনে হত আসলেই কি তেমন কিছু ঘটেছিল, দেখতে মজার ছোটখাট কোন বামন কি আসলেই এসেছিল? 


ঠিক একবছর পর রানী এক কন্যার জন্ম দিলে রাজ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। রানী কিন্তু ভুলেই গিয়েছেন সেই দেখতে মজার বামনটির কথা ও তাকে দেওয়া প্রতিজ্ঞার কথা। কিন্তু রানী ভুলে গেলে কি হবে বামনটি রানীর সামনে একদিন উপস্থিত হয়ে তার শর্তের কথা মনে করিয়ে দিল। রানীর মনে হল তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী, অসহায় বিপন্ন একজন মানুষ। তিনি বামনটিকে রাজ্যের সব সম্পদ দিয়ে দিতে চাইলেন কিন্তু বামনটি তা প্রত্যাখান করল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন রাণী কারণ তিনি তার শিশু সন্তান, তার নয়নের মণিটাকে কিছুতেই বামনটির হাতে তুলে দিতে পারবেন না। রানীর কাকুতি মিনতি দেখে শেষ পর্যন্ত বামনটি রানী কে বলল, “ঠিক আছে, আমি তোমাকে তিনদিন সময় দিলাম; এই তিনদিনের ভিতর তুমি যদি আমার নাম বলতে পার, তবে তুমি তোমার সন্তানকে তোমার কাছে রাখতে পারবে”।


রানী সারা রাত জেগে এ পর্যন্ত যতগুলি নাম শুনেছেন তার তালিকা বানানো শুরু করলেন। পরদিন সকালে বামনটি হাজির হতেই অস্থির রানী একে একে সব নাম বলে যেতে লাগলেন, পিটার, জন, মার্ক, আইজাক, থমাস…… কিন্তু প্রতিবারই উত্তর এলো, “নাহ, এটা আমার নাম নয় এমনকি এগুলির মাঝে কোনটিই নয়”। সেই রাত এবং দিন রানী অকল্পনীয় মানসিক যন্ত্রণায় সম্ভাব্য সব অদ্ভুত নাম নিয়ে ভাবতে লাগলেন। দ্বিতীয় দিন সকালে রানী যখন এক এক করে সব নাম বলে যাচ্ছিলেন বামনটি নিষ্টুর ভাবে হেসে বলল, “তুমি কখনোই আমার নাম বলতে পারবে না”। তারপর গুণগুণ করে নাচতে নাচতে বামনটি চলে গেল। রানী তার সব অনুচরকে চারিদিকে পাঠিয়ে দিলেন নতুন নাম সংগ্রহের জন্য। ভাগ্যক্রমে এক অনুচর অনেক নাম সংগ্রহ করে জঙ্গলের পথ ধরে প্রসাদে ফেরার পথে শুনতে পেল এক বামন অদ্ভুত ভাষায় গান এবং নাচ করছে, তার সন্দেহ হল তাই সে চুপ করে আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল বামনটির কান্ড কারখানা।


“আহ! কি মজার ভোজ হবে আজ সব তৈরী, কাল হবে কাবাব নাচব আর গাইব, গাইব আর নাচব!! রানীর বাচ্চা হাতের মুঠোয় রানী হারবে এই খেলায় কেউ জানে না, নাম আমার রামপেলস্টিল্টস্কিন!”


রাণীর বিশ্বাসী অনুচর রানীকে ভাগ্যক্রমে জানতে পারা সেই বামনের নাম বলে দিল। তৃতীয় দিনে রানী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সে বামনটির জন্য। বামনটি উৎফুল্ল মন নিয়ে প্রসাদে আসল এবং ক্রুর হাসি দিয়ে রানীর দিকে তাকাল। বামনটির সাথে শুরু হয় রানীর কথোপকথন।


রানী – তোমার নাম কি উইলিয়াম? বামন- নাহ! রানী- তবে কি তুমি চার্লস? বামন- অবশ্যই না। রানী- হুমম, তবে কি রামপেলস্টিল্টস্কিন? বামন- কে বলেছে তোমাকে, কে ??


হতবাক বিহবল বামন। রাগে ক্রোধে অন্ধ হয়ে পা পাগলের মত অস্বাভাবিক আচরণ করতে করতে পা ঠুকতে লাগল মেঝেতে, ফলে গর্ত হয়ে গেল মেঝে এবং সে গর্তেই পতিত হল সে বামন। গর্ত থেকে উঠে রাগে গরগর করতে করতে সে প্রস্থান করল রাজপ্রসাদ থেকে। অনেক দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল তার রাগান্বিত গররর শব্দ আর হাহাকার! কেউ কখনোই আর দেখেনি রামপেলস্টিল্টস্কিন নামের বামনটিকে, সে রাজা রানী এবং তাদের শিশুকে কোনদিন বিরক্ত করেনি সে। অতঃপর রাজ্যে নেমে এলো প্রশান্তির বারিধারা।

No comments

Powered by Blogger.